লক্ষ্মীপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই পরিষদের ইউপি সদস্যদের অনাস্থা।

নিউজ ডেক্সঃ দৈনিক লক্ষ্মীপুর সংবাদ। 
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে এক‌ই পরিষদের ১০ ইউপি সদস্য (মেম্বার) অনাস্থা দিয়েছেন।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দের কাছে লিখিতভাবে এ অনাস্থার চিঠি দেওয়া হয়। এতে ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বেপরোয়া আচরণ, অনিয়ম, দুর্নিতি এবং ৭ মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরেন।
অনাস্থা চিঠিতে ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ময়ুর, মহিন উদ্দিন ভূঁইয়া, গোলাম মাওলা, মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ কামরুজ্জামান, জাবের হোসেন, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য জোসনা বেগম, কল্পনা রানী নাথ ও ইসরাত জাহান সহ ১০ জন ইউপি সদস্য স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের অতি-দরিদ্রের কর্মসংস্থান খাতের ৮২ জন শ্রমিকের নামে ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা ওয়াহিদুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা কিছুই জানেন না।এছাড়াও টি আর, কাবিখার ১০ লাখ টাকা, ৭ মাসে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সের প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন। এসব ক্ষেত্রে কত টাকা জমা হয়েছে-তাও নির্দিষ্টভাবে জানান না তিনি। পরিষদের বিভিন্ন নিয়মাবলী সম্পর্কে অবহিত করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি পরিষদের সদস্যদের সঙ্গেও বেপরোয়া আচরণ করেন। পরিষদের কক্ষ ঠিকাদারদের কাছে ভাড়া দিয়ে ১০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছেন। কিন্তু ওই টাকা ব্যাংক হিসেবে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা জমা দেননি।শালিস বাণিজ্যের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। সদস্যদের সঙ্গে সভা না করেই তিনি এডিপি খাতে ১০ লাখ টাকার প্রকল্পের তালিকা জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণে ইতিমধ্যে উন্নয়ন খাতের ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বরাদ্দ ফেরত গেছে। এর আগে চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে অনাস্থা দেওয়া হয়েছিল।
পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন ময়ুর বলেন, ২৬ জানুয়ারি চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিষদের সদস্যদের নিয়ে কোন সভা করা হয়নি। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার করেন। বরাদ্ধ সঠিকভাবে বন্টন করেন না। আমাদের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে ভূয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে তিনি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। এসব অনিয়মের কারণেই বাধ্য হয়েই আমরা অনাস্থা দিয়েছি।
এবিষয়ে সরজমিনে গিয়ে জানাযায় যে, অতি-দরিদ্রের কর্মসংস্থান খাতের ৮২ জন শ্রমিকের নামে সিম কার্ড নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান উত্তোলন করেছেন। যা শ্রমিকেরা কেউ অবগত নয়।
এবিষয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়,  তারা মোবাইল সিম ও বিকাশের ব্যাপারে কিছুই জনেনা, এবং তারা কোন রাস্তার মাটির কাজ ও করে নাই।
সোনাপুর বাজার সিম ও বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ী রিহান ষ্টোরের মালিকের কাছ থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে ধাপে ধাপে এসকল বিকাশ সিমের টাকা উত্তোলন করেছেন।
পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে  বলেন পরিষদের সকল প্রকল্প সদস্যদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। কোথাও অনিয়ম হলে প্রকল্প সভাপতিরা জানেন। আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সত্য নয়। আমি পরিষদের সচিব মিজানুর রহমানের অনিয়ম ও খারাপ আচারণের কারণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় লিখিত অভিযোগ করেছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সচিব মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান খামখেয়ালি-বেপরোয়া কথাবার্তা বলেন। তিনি কারো সঙ্গে সমন্বয় করেন না। এতে ইউনিয়নের লোকজন সেবা ও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, অনাস্থার চিঠিটি পেয়েছি। তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে।তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *